চাকরি করে ধনী

মাল্টি ন্যাশনালে ভালো একটা চাকরি পাইলে, মাসে মাসে ৬০ হাজার করে বেতন দিলে, বছরে ৭ লক্ষ বিশ হাজার টাকা। মনে মনে পুলকিত হইতে হইতে ভাবলেন যে, ধনী হয়ে যাবেন। না, এই ধারণাটা ভুল। দুই/তিন মাস যাইতে না যাইতেই দেখবেন বেকার থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ অর্থ কষ্টে ছিলেন মাসের শেষ ১০ দিন মোটামুটি একই পরিমাণ অর্থকষ্টে চলে। বছরের অর্ধেক পার হইলে ভাববেন নেক্সট বছরে স্যালারী বাড়লে, বোনাস পাইলে এই অবস্থা আর থাকবে না। এইটাও ভুল। এক মাস না যেতেই দেখবেন যেই লাউ সেই কদু।

তাইলে সমস্যাটা কোথায়?

সমস্যা হচ্ছে, টাকা পাওয়ার আগেই খরচ রেডি। পুরাণ ১২ হাজার টাকার বাসাই আর থাকা যাচ্ছে না। মেইন রোডের কাছাকাছি ১৯ হাজার টাকার দুই বেড রুম ওয়ালা বাসা লাগবে। সিএনজি পাইতে অনেক কষ্ট হয়। গাড়ির জন্য প্রায় সব ব্যাংকই তো লোণ দেয়। লোণ নিয়ে কত্ত কত্ত আরামসে অফিস চলে যাওয়া যাবে, কোন টেনশন নাই। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা লোণ নিয়ে গাড়ি কিনে অফিসে যাই। আবার অফিসে যাই যাতে বেতন পেয়ে লোণের টাকা শোধ করতে পারি।

আপনি ৬০,০০০ টাকা বেতন পাওয়ার পর মাস শেষে যদি ৫৯,০০০ হাজার টাকা নাই হয়ে যায়, তাইলে আপনি মাসে মাসে ৬০,০০০ টাকা কামাচ্ছেন না বরং ১০০০ টাকা কামাচ্ছেন। আমাদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, আমরা মনে করি, নতুন গাড়ি, থ্রিডি টিভি বা বড় বাসা, আইফোন সিক্স আমাকে বড়লোক বানায় দিবে। জিনিসটা ভুল। নতুন টিভি, ব্র্যান্ড-নিউ গাড়ি মাসে মাসে আপনাকে নতুন টাকা দিবে না বরং ড্রাইভারের বেতন, গ্যারেজের খরচ, ইঞ্জিন চেক আপের জন্য পকেটে থেকে আরো বেশি টাকা চলে যাবে। তাই এগুলা সম্পদ নয়, এগুলা দায়বদ্ধতা বা ঋণ। আর এসব দায়বদ্ধতাকে সম্পদ ভেবে আরো বেশি দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে যাই আমরা মিডেলক্লাসের ধনী হতে চাওয়া মানুষেরা।

অনার্স করো, মাস্টার্স করো, চাকরি খুঁজে, বেশি বেশি পরিশ্রম করে, সফল হওয়ার চেষ্টার চাইতে যৌবনের মেধা আর শ্রম দিয়ে এমন একটা কিছু করেন যাতে দশ বছর পরে অন্যদের শ্রম থেকে আপনার আয় হয়। পকেট থেকে টাকা বের হয়ে যাওয়ার চাইতে বেশি টাকা আসে। কোন কোম্পানি কখনোই আপনাকে এত বেশি বেতন দিবে না যাতে খেয়ে পরে জীবন ধারণের পরে আপনি লাখপতি হয়ে যাবেন। সেটা করতে দিলে, আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে আপনাকেই বিচি ছুড়ে মারবে কেমন করে?

 

সুত্রঃ ঝংকার মাহবুব