আমাদের জীবনগুলো বেড়ে উঠে কিছু প্রি-ডিফাইন্ড ফর্মুলা, কিছু মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে। বাবা মা শিখিয়ে দিয়েছে, ভালো স্কুলে ভর্তি হলে, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে, জীবন সফল হয়ে যাবে। কিছুদিন পরে সেটা চেইঞ্জ করে, ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাইলে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হইলে, লাইফে আর কিছু করা লাগবে না। তারপরে আসে, মাল্টি -ন্যাশনালে চাকরি, আট ঘন্টার জায়গায় ১২ ঘন্টা গাধা খাটুনি, উইকেন্ডের দিনগুলিতে কাঁচাবাজার আর বিয়ের দাওয়াতে দৌড়াদৌড়ি। আর পুরো জীবনটার উপ্রে, একটা মুখোশ বসিয়ে দিয়ে, খুব আয়েশ করে বলি, “এই বেশ ভালো আছি”
আসলেই কি ভালো আছি? নিজের সখ, ছোটবেলার স্বপ্ন, ভালো লাগার জিনিসগুলো, তারা কি ভালো আছে? না ভালো নেই। ধূলো মুছে প্রিয় গিটারের তারগুলি ছুঁয়ে দেখিনি মাসের পর মাস, কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছি ছোটবেলার কবিতার খাতা, কতদিন খেলতে যায়নি প্রিয় খেলা, শিখতে গিয়ে মাঝ পথেই ছেড়ে দিয়েছি ক্লাসিক্যাল ড্যান্স। কেনো জানি রুটিন আর যান্ত্রিকতায় হারিয়ে গেছে সব ভালো লাগা, উপভোগ করা। চাইলেই আমরা ফেলে আসা জীবনে ফিরে গিয়ে আরেকটু বেশি এনজয় করতে পারি না। তবে, চাইলেই জীবনের বাকি দিনগুলাকে আরো আনন্দময় করে তুলতে পারি। এখন যে আফসোস করছি, আরো পাঁচ-দশ বছর পরে, পিছনে তাকিয়ে, সেই একই আফসোস করাটা বন্ধ করতে পারি।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে, যে পথটা অন্যকেউ দেখায় দেয়, সেটা ছাড়া অন্য কোন পথ দেখি না। কেনো জানি দেখতেও চাই না। ঐটাই সহজ পথ মনে হয়। সহজ ভেবে, একই পথে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু একটু ভেবে দেখিনি, এই পথটাতেই কি আমি হাটতে চেয়েছি? এই চাকুরীটাই কি আমি করতে চেয়েছি? এই সাবজেক্ট টাই কি আমি পড়তে চেয়েছি? কোন পথে, পথের টানে না থেকে, মোহের টানে থাকলে, পথ একদিন না একদিন অন্য কোন অপশনরে কাছে টেনে নিয়ে, আপনারে টাটা বাই বাই করে দিবে। পথ থেকে ছিটকে, অথৈ সাগরে পড়তে সময় লাগবে না। সঙ্গী হিসেবে পাবেন দুর্বিষহতা আর হতাশা। তাই, কোন পথে যেতে হলে, হয় ওই পথটাকে এনজয় করার উপায় খুঁজে বের করেন, না হয় নতুন পথের সন্ধানে একটু ডানে-বামে, সপ্তাহে এক-দুই ঘন্টা চেষ্টা করেন। এভাবে লেগে থাকলে, গহিন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হলেও, আজকে না হয় কালকে, নতুন আরেকটা সহজ পথ তৈরী হবে, যা আপনাকে আনন্দ দিবে, অন্যদের আলো দেখাবে। হয়তো টাকা কম থাকবে, সোশ্যাল স্ট্যাটাস কম হবে, কিন্তু একটা পরিতৃপ্তি আসবে।