You are currently viewing নিজের কাজটিকে ভালোবাসতে শিখছি তো?

নিজের কাজটিকে ভালোবাসতে শিখছি তো?

স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমের মধ্যে দেখ। স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না”- এ পি জে আবুল কালাম। কি চমৎকার কথা, মোটামুটি সবাই শুনেছি। আসলেই তো তাই, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচাই তো জীবন। কিন্তু আমরা যে স্বপ্নগুলো নিয়ে বাঁচি সেগুলো আসলেই কি আমাদের স্বপ্ন? যেগুলোকে স্বপ্ন ভেবে পিছে পিছে অবিরাম ছুটে চলেছি সেগুলো আমাদের ঘুনেধরা শিক্ষা ব্যবস্থার কোন মরীচিকা নয় তো?

বিজ্ঞান বলে জন্মগত ভাবে প্রত্যেকটা মানুষই অনন্য। ডিএনএ ভিন্নতার কারণে শারীরিক কিংবা মানসিক বৈশিষ্ট্য দুটো মানুষের কখনই এক হয় না। কিন্তু এই ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য লালনের সু্যোগ কি আমরা পাই?

সমাজ আর শিক্ষা ব্যবস্থা মিলে আমাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ছেঁটে ফেলে আমদের সহজাত স্বপ্নগুলোকে মুছে দিয়ে আমদের ভেতর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, উকিল ইত্যাদি নানান চড়া বাজার দরের মানুষ হবার স্বপ্নের বীজ বুনে দেয়। একেবারে শৈশব থেকে আমরা এই স্বপ্নগুলোর পেছনে ছুটতে থাকি। এগুলোর বাইরে কিছু ভাবাটাই চরম আহাম্মকি হিসেবে বিবেচিত হয়। শুরুটা হয় একবারে স্কুল থেকেই। স্কুলে ভর্তি হয়েই বুঝে যাই তাদেরকেই ভাল ছাত্র হিসেবে ধরা হয় যারা ম্যাথ আর ইংরেজি ভাল পারে। আর যারা পারেনা তারা হয় বি গ্রেডের ছাত্র।

বাবা মা ছোট বেলা থেকেই এদের বোঝা ভাবতে থাকে। বন্ধুদের আড্ডায় এরা মশকরার পাত্র হয়ে থাকে। শিক্ষকদের কাছে এরা বলদ। কিন্তু কেউ এদের জিজ্ঞেস করে না আদৌ তাদের গণিতে মন বসে কিনা, ভাল লাগার অন্য কোন বিষয় আছে কিনা, কিংবা পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য কোন জগতে মন পড়ে থাকে কিনা।

ক্লাস নাইন টেনে এসে এ গ্রেডের ছাত্ররা হয় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আর বি গ্রেডের ছাত্রদের ঠাঁই হয় মানবিক কিংবা বাণিজ্য বিভাগে। এরপর বিজ্ঞানের ছাত্ররা প্রাণপণে খাটতে থাকে মেডিকেল কলেজে কিংবা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোন এক সাবজেক্টে পড়ার জন্য। মানবিক আর বানিজ্য বিভাগের জন্যেও লক্ষ্য সীমাবদ্ধ। মানবিক হলে আইন,অর্থনীতি কিংবা ইংরেজি আর বাণিজ্য হলে ব্যবসায় প্রশাসন।

c3fdaf0d565913a04d19b108fdc0a39c

চার বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার হিসেবে “দামি” সাবজেক্টগুলোতে কিছু ছাত্র ভর্তি হয় আর বাকিরা ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বাকি গুলোতে। চার কিংবা পাঁচ বছর পরে সবার হাতেই উচ্চ শিক্ষার একটা সার্টিফিকেট থাকে কিন্তু এতটা পথ হেঁটে এসেও বেশিরভাগের কাছেই উত্তর থাকে না যে সে যে পথে হেঁটে এসেছে আদৌ সে পথ তার নিজের মত ছিল কিনা,সে পথে তার ভাল লাগা আর ভালবাসা ছিল কিনা। কারো কাছে যদি উত্তর থেকেও থাকে তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এই ১৬-১৭ বছরের লম্বা সময়ে মনের জগতে, নিজস্বতার জগতে যে তালা পড়ে ছিল সেই তালা ভেঙ্গে নতুন পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করার সাহস আর থাকেনা।

অগত্যা নিয়মের পাকে পড়ে, বাস্তবতার কাছে হেরে নয়টা থেকে পাঁচটার গতর খাটার খাতায় নাম লেখাতে হয়।

রঙ তুলিতে যে সমস্ত স্বত্তা নিয়ে মিশে আছে, আর্থিক হিসেব মেলাতে তাকে চারুকলার বদলে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হয়েছে। সাহিত্য যার ধ্যান জ্ঞান, পরিবার তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে আইন নামক চকমকে জ্ঞানের পাথর।

ভালবাসা আর ভাললাগাহীন এই জীবনে দিন শেষে কেবল থাকে একরাশ মানসিক আর শারীরিক ক্লান্তি, বিরক্তি। কেউ কেউ এই জীবনকে আপন করে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু বড় জোর বশে আসে, পোষ মানে না। কেনই বা মানবে, ওই জীবন তো আপনার “নিজের” না।

বাইরে থেকে সমস্যা কিছুই বোঝা যায় না, কারণ জীবন তো থেমে থাকে না। কিন্তু ভেবে দেখুন যে ছেলেটার গাছের চারার কচি সবুজে সবটুকু খুশি লুকিয়ে ছিল সে কৃষিবিদ হতে পারেনি, তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাক্তার হতে হয়েছে। যে মেয়েটার ফিজিক্সের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে শত শত।

কোনো সমস্যায় আটকে আছো? প্রশ্ন করার মত কাউকে খুঁজে পাচ্ছ না? যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে চলে যাও ১০ মিনিট স্কুল ফোরামে!

নির্ঘুম রাত পার করেছে বাবার একগুঁয়েমিতে তাকে শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয়েছে। ক্রিকেট যার প্রাণ তাকে খেলতে দেওয়া হয়নি, তাকে শেষ পর্যন্ত বিবিএ পড়তে হয়েছে। রঙ তুলিতে যে সমস্ত স্বত্তা নিয়ে মিশে আছে আর্থিক হিসেব মেলাতে তাকে চারুকলার বদলে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হয়েছে। সাহিত্য যার ধ্যান জ্ঞান, পরিবার তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে আইন নামক চকমকে জ্ঞানের পাথর।

এতে করে কি হচ্ছে জানেন? ব্যক্তিগত জীবনে আত্নিক আর মানসিক অপমৃত্যু হচ্ছে আর জাতীয় জীবনে আমরা হারাচ্ছি একজন কৃষিবিদ,পদার্থবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিত্রশিল্পী, খেলোয়াড়, কবির মত হাজার হাজার অমূল্য সত্তা। সময়ের নিরিখে মিলিয়ে দেখুন তো জয়নুল, নজরুল, জসীমউদদীন, এফ আর খান, জগদীশের মত বিশ্বমানব শেষ কবে পেয়েছিলাম।

সূত্রঃ ১০ মিনিট স্কুল।