ধরাকে সরা জ্ঞান করার এক অসাধারণ ক্ষমতা নিয়েই অধরা-র জন্ম হয়েছিলো। জন্মের আগেই তার মা-বাবা নাম ঠিক করে রেখেছিলেন সন্তানের। ঠিক করে রেখেছিলেন আরো অনেক কিছুই। প্রথম সন্তানকে নিয়ে সহজাতভাবেই বাবা-মায়েদের আগ্রহের অন্ত থাকে না। সন্তান জন্ম নেবার আগেই তার ভবিষ্যত নিয়েও তাই অনেকটাই ভেবে রেখেছিলেন অধরার বাবা-মা। বাবা-মায়ের ইচ্ছা সন্তানকে ডাক্তার বানাবে। এদিকে নানার ইচ্ছে নাতনীকে বানাবে বিরাট বড় উকিল।

ওদিকে অধরা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড়ি দিয়ে অধরা নিজে আবিষ্কার করতে পারলো, অঙ্কে সে বড্ড দুর্বল। হিসেব মেলাতে তার খুব কষ্ট হয়। বিজ্ঞান তার কাছে বড্ড গোলমেলে। হঠাৎই সে আবিষ্কার করলো, খুব সহজেই সে নিমগ্ন হয়ে যায় সাহিত্যের সাগরে; খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে ভূগোল। দর্শন, মনোবিজ্ঞান, সাহিত্যে ক্রমশই বেড়ে চলে তার আগ্রহ। সে ঠিক করে সাহিত্য, দর্শন, মনোবিজ্ঞান কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান হবে তার উচ্চতর পড়ালেখার বিষয়।
প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারেন নিজের মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে
ওদিকেও বাবা-মাও সন্তানকে ডাক্তার কিংবা উকিল বানাতে প্রস্তুত। এমন বেকায়দায় পড়ে অধরা ক্রমশ হারিয়ে ফেলে লেখাপড়ায় আগ্রহ। অধরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক ধরনের শারীরিক অসুস্থতাও শুরু হয়। প্রাণচঞ্চল অধরা হঠাৎই খুব নীরব, নির্জীব আর অসামাজিক হয়ে যেতে থাকে। কারো সামনে যেতে চাইতো না। কারো সাথে মিশতেও চাইতো। অধরা তার বন্ধুদেরও হারাতে শুরু করে।
অধরার পরিবারের অন্য কেউ অধরার এই বিপর্যস্ত অবস্থা বুঝতে না পারলেও মা তাকে বুঝতে শুরু করে। সেদিন থেকে শুরু হয় অধরার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এরপর নিজের পছন্দ মতো বিষয়ে ভর্তির হয়ে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন অধরা। প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারেন নিজের মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে। তবে, জেনে নিন আপনার করণীয় গুলোঃ
৭। মনছবি দেখুনঃ
আপনি বাস্তবে যা পেতে চান, তা কল্পনায় অবলোকন করাই হলো মনছবি। আপনার লক্ষ্য যখন অবিচল হবে, তখন আপনি চোখ বন্ধ করে কিংবা ঘুমের মধ্যে অর্থাৎ আলফা লেভেলেও তা অবলোকন করতে পারবেন। নিজের লক্ষ্যকে সদা জাগ্রত রাখুন এভাবেই ।
৬। লক্ষ্যে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন নাঃ
লক্ষ্যে অবিচল থাকতেই হবে আপনাকে। দ্বিধায় পড়ে গেলেন তো ভুল করলেন। লক্ষ্য নির্বাচনের আগে প্রয়োজনে সময় নিন। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু, সিদ্ধান্ত নেবার পর দ্বিধায় ভুগবেন না। সিদ্ধান্তে দ্বিধা ঢুকে গেলে, এই দ্বিধাই আপনাকে আরও ভুল সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাবে। তাই যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিন, থাকুন নিজের লক্ষ্যে অবিচল।
৫। সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিন নিজের ইচ্ছাকেঃ
আপনার ভালো লাগাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। কোন বিষয় পড়ে আপনি আনন্দ পান সেটা আবিষ্কার করুন। আনন্দ ছাড়া আপনি কখনোই সফলতা পাবেন না। লেখাপড়া আনন্দের সাথেই করতে হবে। আনন্দকে আবিষ্কার করে সেই দিকে ধাবিত হোন। আপনার মন যেদিকে সেদিকেই আপনার গন্তব্য ।
৪। সমাজকে গুরুত্ব দেবেন নাঃ
‘পাছে লোকে কিছু বলে’ –এটা নিয়ে চিন্তিত হবেন না। পাশের বাসার আন্টি কিংবা ভাবী কি বলবে, এ কি বলবে, ও কি বলবে, এসবকে কোনোদিনো কেয়ার করতে যাবেন না। সমাজের চোখে কোন বিষয় দামী, সমাজের মানুষেরা কী ভাববে, কে গুরুত্ব দেবে বা কে দেবে না –এগুলো নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন হবেন না। আপনি হেরে গেলে সমাজই আপনাকে সমালোচনা করবে; জিতলে দেবে বাহবা। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। সমাজের কাজই হলো আপনার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া। অতএব, সমাজকে জিততে দেবেন না। জীবনে জয়ী হতে হবে তো আপনাকে।
৩। লক্ষ্য অনুযায়ী সাবজেক্ট নির্বাচন করুনঃ
আপনার ফিউচার প্রফেশনের সাথে সাবজেক্টটি কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটা বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট চয়েজ এর ওপরেই আপনার সামনের দিনগুলো নির্ভর করবে। যেমনঃ ডাক্তার হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মেডিকেলে পড়তে হবে, তেমনি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে যেকোনো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে। অন্যদিকে শিক্ষক হতে চাইলে পছন্দনীয় বিষয়ে। সাহিত্যপ্রেমী হলে সাহিত্যের বিষয়ে, গবেষক হতে চাইলে পড়ুন গবেষণাধর্মী যেকোনো আগ্রহের বিষয়ে। সাংবাদিকতায় আগ্রহ থাকলে অবশ্যই সাংবাদিকতায় পড়ুন। ফিল্মে আগ্রহ থাকলে টিভি ও ফিল্ম স্টাডিজে পড়তে পারেন। সবথেকে বড় কথা হলো- ভবিষ্যত প্রফেশনের সাথে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। মনে রাখবেন চাকরি মানেই ক্যারিয়ার নয় । জীবন তার চাইতেও অনেক বড় । জীবনের সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করুন ।
২। বাবা-মায়ের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার চেষ্টা করুনঃ
নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে বাবা-মায়ের মতামতকেও বিবেচনা করে দেখুন। সবসময় মনে রাখবেন, তাঁরা কখনোই আপনার খারাপ চায় না। যেহেতু, জীবন ও জগত নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা বেশি, তাই তাঁদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন। তাঁদের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা করতেই পারেন। তবে, নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে না। নিজের মনের বিরুদ্ধে কাজ করে আপনি কোনদিনই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।
১। মা-বাবাকে বন্ধু বানানঃ
মা-বাবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন। দুজনের সাথে সম্ভব না হলে, অন্তত একজনের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলুন যিনি আপনাকে বুঝতে পারবে। লক্ষ্যের দিকে মসৃণ ভাবে এগিয়ে যেতে এটি আপনাকে করতেই হবে। বাবা মায়ের দুজনকে চটিয়ে আপনি শান্তিতে এগোতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করুন তাদের মধ্যে অন্তত একজনকে আপনার বন্ধু বানাতে। সবকিছু শেয়ার করুন। মাঝেমধ্যে একসাথে খেতে যান, ঘুরতে যান। আনন্দের মূহুর্ত গুলোতেই আপনাকে তাদের সামনে প্রকাশ করুন। আপনার ভালো লাগা-খারাপ লাগার কথা জানান। আপনার পছন্দের বিষয় এবং পছন্দের প্রফেশন নিয়েও আলাপ করুন। ইতিবাচক দিক গুলো গল্পচ্ছলে তুলে ধরুন।
জীবনের এই পর্যায়ে বাবা-মায়েদের স্বপ্ন বনাম সন্তানদের ইচ্ছার এক স্নায়ুযুদ্ধ চলতেই থাকে। অন্যদিকে নানা ধরনের দ্বিধা-দোটানা -শঙ্কা এসেও ভিড় জমায়। তবু শত প্রতিকূলতার মধ্যে আপনাকে থাকতে হবে অবিচল। বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের ওপর। এই সময়টাকে অতিক্রম করা হয়তো কিছুটা কঠিন। কারণ, এই সময়েই নির্ধারন হয় আপনার জীবন জাহাজ কোন তীরে গিয়ে ভিড়বে। পরিস্থিতির স্টিয়ারিংটা আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের হাতে রাখতে পারলেই আপনি হয়ে উঠবেন আকাঙ্ক্ষার ‘অধরা’। ছুঁয়ে যেতে পারবেন নিজের স্বপ্নকে।
সূত্রঃ ১০ মিনিট স্কুল ।