You are currently viewing নতুন হোমিও চিকিৎসকদের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগ চিকিৎসা নির্দেশনা !!

নতুন হোমিও চিকিৎসকদের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগ চিকিৎসা নির্দেশনা !!

14457468_1095119610570673_6698750354741402981_n3

শীতকালে আমাদের কাছে শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগী বেশি আসে । এর মধ্যে কাশি খুব কমন রোগ । কাশি নিয়ে আপনাদের তেমন সমস্যা না হলেও ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানি ও নিউমোনিয়া চিকিৎসায় অনেকেরই সমস্যা হয় । বড় সমস্যা হয় মেডিসিন সিলেকশনে । এ রোগ চিকিৎসায় আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানাবো ।

আপনারা জানেন হোমিওতে “কি রোগ” এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নাই , রোগীর লক্ষন সাপেক্ষে মেডিসিন সিলেক্ট করতে হয় , তা যেই রোগ হোক না কেনো।
তবুও একটা কথা থাকে । অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ওষুধ কিছু রোগের জন্য ব্যবহার করে ভালো রেজাল্ট পেয়েছেন , এখানে লক্ষন এর চেয়ে ঐ রোগে ঐ ঔষুধের কার্যকারিতাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । যদিও এ ট্রিটমেন্ট হোমিও ল সমর্থন করে না । এবং অনেক চিকিৎসক পছন্দও করেন না । কিন্তু আমার কাছে রোগ চিকিৎসায় এ বিষয়টা বেশ গুরুত্ম বহন করে । এর কারন হলো খুব অল্প সময়ে মেডিসিন সিলেক্ট ও দ্রুত রেজাল্ট । এটা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে , প্রায় ৮০% ক্ষেত্রে এ মেডিসিন খুব ভালো কাজ করে ।

আসেন এবার মূল আলোচনায় যাই , নতুন কাশি , ব্রঙ্কাইটিস , নিউমোনিয়ার ও হাপানিতে আমি একোনাইট , ব্রাইয়োনিয়া , এন্টিম টার্ট, ফসফরাস ও সালফার এই পাঁচটি ওষুধ বেশি ব্যবহার করে থাকি , কোনো কোন সময় টিউবারকুলিনাম ও নিউমোকক্সিন ও ব্যবহার করে থাকি ।
আপনাদেরও এই পাঁচটি ঔষধ
১) একোনাইট
২) ব্রাইয়োনিয়া
৩) এন্টিম টার্ট
৪) ফসফরাস
৫) সালফার

হাতের কাছে থাকলে , এই রোগ নিয়ে টেনশন করতে হবে ।
অনেক সময় আর্সেনিক, টিউবারকুলিনাম ও নিউমোকক্সিন লাগে ।
আসুন এবার আমরা এর প্রয়োগ দেখিঃ

শীতল শুষ্ক বাতাসের কারনে রোগ (যে রোগ হোক), উদ্বিগ্নতা , ছটফটানি , পিপাসা , নাড়ি দ্রুত , রোগ যন্তনায় এপাস ওপাস করা , ঠিক ভাবে বা স্থির ভাবে না থাকা , একটা অসস্তি ভাব – এসব লক্ষনে শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত যে সমস্যা হোক , সর্দি , কাশি , ব্রঙ্কাইটিস , নিউমোনিয়া , হাঁপানি ইত্যাদিতে একোনাইট – 3X , 6 শক্তির ঔষধ ঘন ঘন দিন । রোগ অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যাবে । এবার একটা তথ্য দেই , শ্বাস সংক্রান্ত রোগে কোনো লক্ষন না পাওয়া গেলেও প্রথম প্রাদাহিক অবস্থায় একোনাইট- 3X , 6 প্রয়োগে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় ।

যারা ডাক্তার না , বাট আমার লেখা পড়ছেন তাদের জন্য পরামর্শ এসব রোগ বুঝতে পারলে আগে এক মাত্রা একোনাইট -৩X , ৬ খাইয়ে তারপর ডাক্তার ডাকুন , আর ডাক্তার সাহেবকে বলুন আপনি এক মাত্রা একোনাইট নিয়েই তাঁকে ডেকেছেন । (কোনো হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে মাত্রা জ্ঞান শিখে নিবেন ও ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় একটি হোমিও ফাস্ট এইড বক্স রাখবেন )
একোনাইটের পরের স্টেপ হচ্ছে ব্রাইয়োনিয়া । বুকে যখন ঠান্ডা বা সর্দি বসে যায় , কাশি খুব শুষ্ক , লেরিংসের প্রদাহ , পায়খানা কষা বা কন্সিটিপেশন (কাশি শুষ্ক থাকলে পায়খানা কষা লক্ষন না থাকলেও হবে , তবে থাকলে ভালো) , ব্রাইয়োনিয়া ৬ , ৩০ দিবেন ।

হোমিওর ল বা আইন হলো এক বারে একটি ঔষধের প্রয়োগ , কিন্তু আমি নিজের ও অভিজ্ঞজনদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক সময় প্রথমে একোনাইট পরে ব্রাইয়োনিয়া , এমনকি একোনাইট ও ব্রাইয়োনিয়া পরপর ব্যাবহার করি (একত্রে না , পর পর)। এতে রেজাল্ট আসে খুব দ্রুত ।
তিন নাম্বারে এন্ট্রিম টার্টের কথা বলছিলাম , ব্রাইয়নিয়ার সাথে এর পার্থক্য হলো , ব্রাইয়োনিয়ার কাশি শুষ্ক , রোগী কাশতে থাকে কিন্তু কফ বের হয়না , কাশতে কাশতে বুকে ব্যাথা হয়ে যায় । ডাক্তারের কাছে প্রথমে বলে , তার কাশি খুব শুকনা । আর এন্টিম টার্ট ঠিক এর বিপরীত , কাশি সাথে বুকের মধ্যে প্রচুর কফের ঘরঘরানি , ও শেষ্মাযুক্ত ।

এবং ব্রাইয়োনিয়ায় প্রথম ফুসফুস আক্রান্ত হয় , আর এন্টিম টার্টে প্রথম শ্বাস নালিত আক্রান্ত হয় এর পর আস্তে আস্তে ফুসফুসের দিকে যায় । ব্রংকো নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসে অনেক সময় শুধু মাত্র এই একটা ওষুধ (এন্টিম টার্ট) রগীকে সুস্থ্য করে তোলে ।

একটা কথা বলে রাখা ভালো , যখন সকল লক্ষন বা প্রয়োগক্ষেত্র এন্টিম টার্টের মত কিন্তু কফ হলদে , ভারী ও রক্তাক্ত পুজমেশানো থাকে সেখানে এন্টি আইওড এন্টিম টার্টের চেয়ে রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে । (আমার এই পোস্ট তরুন ডাক্তারদের জন্য তাই রোগ জটিল অবস্থায় চলে গেলে , কফের সাথে পুজ রক্ত গেলে । মোট কথা এন্টিম আইওড অবস্থায় গেলে রোগীকে আপনাদের হাতে না রেখে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথদের কাছে রেফার করুন । )

এবার একটি গুরুত্মপূর্ন ঔষধের কথা বলি , আগের ঔষধগুলোও গুরুত্মপুর্ন । তবে নিউমোনিয়ার জন্য অবশ্যই ফসফরাস- ৩০ কে মনে রাখবেন । লক্ষন আপনারা মেটেরিয়া মেডিকায় পড়তে পারবেন , তবে মনে রাখবেন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফসফরাস, ব্রাইয়োনিয়া ও এন্টিম টার্টের মধ্যবর্তি স্থান দখল করে । ব্রায়োনিয়ার মত যখন শুষ্ক ও শীতল বাতাসে রোগ উৎপত্তি হয়না , রোগী খুব ঠান্ডা পানি পান করতে চায় , ও খুব দুর্বলতা থাকে , বাকি সব ব্রায়োনিয়ার মত তখন ফসফরাস ম্যাজিক ফল দেয় । ফসফরাস সম্পর্কে শুধু একটা তথ্য বললেই আপনারা এর গুরুত্ম বুঝতে পারবেন । ১৮৪৪ সালে ভিয়েনার ডাঃ ক্লাইসম্যান একবার ৩৭৭ টি নিউমোনিয়ার রোগীকে শুধু মাত্র ফসফরাস দিয়ে চিকিৎসা করেছিলেন যার মধ্যে ১৯ জন মারা গিয়েছিলো । এ দ্বারাই বোঝা যায় ফসফরাস কি অসাধ্য সাধন করতে পারে ।

তখন এত্ত এলোপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক , ইঞ্জেকশন ইত্যাদি ছিলোনা । রোগীরদের ভরসা বলতে ছিলো একমাত্র হোমিওপ্যাথি ।

এবার আসি সালফার নিয়ে । সালফার – ৩০, ২০০ সম্পর্কে ডাঃ জার বলেছেন “সালফার নিউমোনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ” ! একোনাইটের পরেই সালফার ব্যবহার করা হয় । বলা যায় প্লুরিসি , নিউমোনিয়া , হাঁপানি , ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদিতে আমাদের শেষ ভরসা হলো সালফার ।

এছাড়া অতি অবসন্নতা , অস্থিরতা ও পিপাসার লক্ষনে আর্সেনিক -৬, অনেকস্থানে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা টিউবারকুলিনাম -২০০ ও নিউমোকক্সিন – ২০০ ব্যবহার করেন ( এটা অভিজ্ঞজনদের উপরে ছেড়ে দেন) ।

এবার আসেন, আরো সহজ করে বলিঃ
ধরি আপনার কাছে একজটি নিউমোনিয়ার রোগী আসলো , মনে করতে হবে এর চিকিৎসা খুব ইজি , মানে আপনি নতুন ডাক্তার হিসেবে ভয় পাবেননা ।
এবার সর্ব প্রথম জ্বর , উদ্বেগ , ইত্যাদি লক্ষনে একোনাইট – ৩X , ৬ দিন (কোনো লক্ষন না পেলেও রোগের প্রথম আবস্থায়) । প্রতি ১ বা ২ ঘন্টা পর পর । ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্বর না কমলে সালফার -৩০ দিন । ফুসফুস আক্রান্ত হলে , দ্রুত নিশ্বাস , নিশ্বাসে চাপ বোধ , কোষ্টকাঠিন্য , অতি পিপাসা , শুষ্ক কাসি , বুকে ব্যাথা ইত্যাদি দেখলে ব্রাইয়োনিয়া – ৩০ দিবেন ।

ডাঃ টেসিয়ারের পরামর্শ হলো এমন অবস্থায় সকালে ব্রাইয়োনিয়া দিন এবং রাতে ফসফরাস দিন । কিন্তু আমি শুধু ব্রাইয়োনিয়া দিয়েই ভালো ফল পাই । যদি নিউমোনিয়ার সাথে টাইফয়েট ও কফ মরচে রঙয়ের তাহলে কোনো চিন্তা না করেই ফসফরাস দিয়ে দিন । লক্ষ রাখুন , রোগীর বুক ও কাশি শুষ্ক থাকলে যেমন ব্রায়োনিয়ার কথা বলালাম তেমনি যদি দেখেন বুকে চাপবোধ , অবসন্নতার সাথে কফে বুক ও গলা ঘর ঘর করতেছে , কন্তু কফ তুলতে পারছেনা বা বের হচ্ছে না তখন কোনো চিন্তা নাকরেই এন্টিম টার্ট দিন । আশাকরি কখোনো বিফল হবেন না ।

আমার লেখাটা ভালো করে পড়ুন , এরপর প্রতিটা ঔষধ মেটেরিয়া মেডিকা থেকে পড়ে নিন , চেষ্টা করুন লক্ষন গুলো বুঝে নিতে । লক্ষন মুখস্ত না করে অন্তরে ধারন করা দরকার । রোগী চিকিৎসায় সফল হওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প নাই । রোগ জটিল হলে অভিজ্ঞ হোমিও প্যাথের নিকট রেফার করুন ।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

লেখাটি শেয়ার করুন , আপনার কাজে না লাগলেও অন্য কোনো ভাই এই লেখা দ্বারা উপকৃত হতে পারেন ।

 

https://www.facebook.com/faijulhuqzaid