You are currently viewing create your own miracle

create your own miracle

হালকা বিতৃষ্ণা ::

হালকা একটু আঙ্গুল কেটে গেলে, পানি ধরতে বা মেখে মেখে ভাত খাইতে না পারলে, একটু আধটু মেজাজ খারাপ হইতেই পারে। আবার নতুন জুতা পড়লে, জুতার শক্ত পাশ পায়ের সাথে লেগে ব্যথা বা ফোস্কা পড়ে গেলে হালকা বিতৃষ্ণা আসতেই পারে। কিন্তু কখনোই কি এমন কারো সাথে নিজেকে তুলনা করে দেখছেন, যার একটা হাত বা একটা পা নাই। আপনার কষ্ট কি, তার কষ্টের চাইতে চাইতে বেশি? আপনার ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জগুলা কি, তার চ্যালেঞ্জগুলার চাইতে বেশি? আপনার হতাশ হবার, ছেড়ে দেয়ার কারণ, তার কারণের চাইতে বেশি?

আরামসে আছেন::

Nick Vujicic এর জন্ম থেকেই দুই হাত নাই। নাই তো নাই একদমই নাই। খালি গায়ে তাকে দেখলে আপনি ভাববেন, কে যেনো লেভেল করে তার কাধের সাথে সমান করে দুই হাত কেটে নিয়েছে। একটু কি চিন্তা করে দেখছেন, সে কিভাবে ভাত খাবে। কিভাবে হ্যান্ডশেক করবে, মন খারাপ হলে, কিভাবে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরবে? পরীক্ষার হলে, কলম ধরবে? কিবোর্ডে টাইপ করবে? ফেইসবুকে স্টাটাস দিবে? চিন্তা করে দেখছেন? না দেখেন নাই। দেখেন নাই বলেই, আপনার এত কিছু থাকার পরেও এত্ত এত্ত বিতৃষ্ণা। দুই পয়সার কষ্ট করার আগেই, দুই বস্তা অভিযোগ। ভালো লাগে না, মজা পাই না, টায়ার্ড হয়ে আছি। আমারে দিয়া হবে না। বেশি কিছু করা লাগবে না, জাস্ট পাচ মিনিটের জন্য একটা হাসপাতালে যান। দুই মিনিটেই বুঝতে পারবেন, আপনি কত ভালো আছেন। কত আরামসে আছেন।

সাতার শিখার টেকনিক::

আমরা সাতার শিখতে গেলে, একটা খুটি বা সুইমিং পুলের কিছু একটা ধরে পা দিয়ে পানিতে কিক মারতে থাকি। পা দিয়ে কিক মেরে মেরে, পানি দূরে সরিয়ে, সাতরিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করি। কিন্তু Nick Vujicic, হাত দুটো, নাই তো নাই, জন্ম থেকে পা দুইটাও নেই। এক পায়ে শুধু তিন-চার ইঞ্চি লম্বা একটা আঙ্গুল আছে। একটু ইমাজিন করার পাওয়ার থাকলে, আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, এই একটা আঙ্গুল দিয়ে, পানি কিক মেরে দুরে সরিয়ে সাতার কাটা ইম্পসিবল। আপনি ডাঙ্গর ডাঙ্গর দুইখান পা, সুস্থ-সবল দুই হাত নিয়েই পারেন না। আর এই ছেলে, যার হাত নাই, পা নাই, সে কাটবে সাতার? কারো যদি সাতার কাটা শিখতে গিয়ে পালিয়ে আসতে হয়, কোন কিছু ছেড়ে দেয়ার সত্যিকার কারণ থেকে থাকে, সে হচ্ছে Nick Vujicic। আমি-আপনি না।

জেই নিজের সিস্টেম বের করবেন::

তাই বলে, Nick ঘরে বসে থাকেনি। সুইমিং পুলে গেছে, সাতার শিখতে গিয়ে, পানি খাইছে, ডুবে যেতে বসেছে। তবুও সাতার শিখার চেষ্টা ছেড়ে দেয়নি। একবার দুইবার না, একশ-দুইশ বার না, ঘন্টা পর ঘন্টা চেষ্টা করে, সাতার শিখার সাধনা চালিয়ে গেছে। পা নাই, তাই পা দিয়ে কিক মারার সিস্টেম নাই। তারপরেও বিভিন্ন স্টাইলে চেষ্টা করে যেতে থাকলেন। চেষ্টা করতে করতে শেষমেষ, নিজেই একটা সিস্টেম বের করলেন। সেই সিস্টেম প্রথম দিন সুইমিং পুলে যাওয়ার পর, কেউ তাকে বলে দেয়নি। বার বার নাকানি চুবানি খাইতে খাইতে উনি বের করছেন। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলে, পেটের মধ্যে বাতাস উপর-নিচ করলে, পেটের চামড়া সরে। এই পেটের চামড়া সরানোর কাজ দিয়ে উনি পানি সরানোর কাজ করতে পারেন। এই পদ্ধতি দিয়ে উনি ভেসে থাকতে এবং সাতরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। জীবনে অনেক কিছু করতে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন না, কিভাবে করতে হবে। কেউ এসে বলে দিবে না, এইটার পর এইটা হবে। নাকানি চুবানি খাইতে খাইতে, এক সময় নিজেই নিজের সিস্টেম বের করবেন। সেই লেভেলের মানসিকতা থাকলে, যত বড় বাধার দেয়াল আপনার সামনে আসুক না কেনো আপনি তা উতড়ে যাবেনই যাবেন।

আশার আলো দেখতে পান না::

নিজেরা যখন কিছু একটা করতে পারি না। একই সময় অন্যরা করে ফেলে, তখন নানা তাল বাহানা খুঁজে বের করি। তার বাপের টাকা আছে, ও আগে থেকে প্রোগ্রামিং শুরু করছে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে, ফ্যামিলি সাপোর্ট করতে হয় না, ব্লা ব্লা ব্লা। এইবলে ছেড়ে দেই। ইচ্ছায় অনিচ্ছায়, কারণে অকারণে, হোচট খেয়ে পড়ে যান। কোন আশার আলো দেখতে পান না। আপনি হয়তো একবার দুইবার ট্রাই করলেন বা আরেকটু কষ্ট করে, ধরেন, একশ বার চেষ্টা করার পর আপনি ব্যর্থ হইলেন। এখন যদি আপনি ছেড়ে দেন, আপনি কি লক্ষে পৌঁছতে পারবেন। যা করতে চাইছেন, তা করতে পারবেন। না পারবেন না। বরং আপনি ট্রাই করতে করতে যদি বলেন, যে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত এইটা অর্জন করতে না পারি। যতক্ষণ পর্যন্ত সফল হইতে না পারি ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চলতে থাকবে। তাইলে একদিন না একদিন আপনি সেটা করেই ছাড়বেন। কারণ, দিন শেষে দেখার বিষয় হচ্ছে, আপনি ফিনিশ করতে পারছেন কিনা, লক্ষ্য অর্জন করতে পারছেন কিনা।

 

 

সুত্রঃ ঝংকার মাহবুব